সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেধা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মননকে দেশের মানুষের কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অপরাধী কোন দলের সেটা বিবেচনায় না নিয়ে তাকে অপরাধী হিসেবেই দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১১৬, ১১৭ ও ১১৮তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী এবং সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমাজে যেসব উপসর্গ মাঝে মাঝে দেখা দেয়, যেমন—নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি—এসবের বিরুদ্ধেও আপনাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেখানে কারো মুখ চেয়ে নয়, যারাই অপরাধী, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখবেন—এটাই আমার কথা।’
তিনি যোগ করেন, ‘অপরাধী যে দলের হোক বা যে কেউ হন না কেন, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সমাজটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। সেটাই আপনারা করবেন, আমরা চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মতো দেশটাকে উন্নত করার জন্য আমরা উপযুক্ত কর্মচারী গড়ে তুলতে চাই, মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়। প্রশাসনের সেবা পায়। নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়ার সুযোগ পায়।’ তিনি জানান, সরকারে আসার পর আওয়ামী লীগ প্রশাসনের কর্মচারীদের বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো মানুষকে অবহেলার চোখে দেখবেন না বা তাদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না। মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৭৫ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উদ্ধৃতি দেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমি গাড়ি চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক।’
শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে শিখেছি, রিকশাওয়ালাকে আপনি বলে সম্বোধন করেছি। কারণ, আমাদের বাবা-মা সেটাই শিখিয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেরই অবদান রয়েছে এই সমাজের প্রতি। প্রত্যেকের অবদান রয়েছে দেশের প্রতি। সে কথাটা মনে রাখতে হবে। তা ছাড়া কর্মক্ষেত্রে সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ, আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের সেবা করা।’
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন স্বাগত বক্তব্য দেন। একাডেমির রেক্টর বদরুন নেছা কোর্সের ফল প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন।
এ বছরের ৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া পাঁচ মাসব্যাপী এবারের কোর্স করোনার কারণে বিলম্বিত হয় এবং অনলাইনে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। ১১৬ জন অংশগ্রহণকারীর সবাই কৃতকার্য হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী রয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী তিনজন শিক্ষার্থীর হাতে রেক্টরস পদক তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী সনদপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এই করোনাকালীন অবস্থার মধ্যেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সাফল্য অর্জন করেছেন। কাজেই আপনাদের এই অর্জিত জ্ঞান আপনারা দেশের কাজে অবশ্যই লাগাবেন। কেননা দেশটাকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেটা মনে রাখতে হবে।’
করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোর্স সম্পন্ন করতে পারায় শিক্ষার্থীরা অনন্য নজির স্থাপন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন একটি অস্বাভাবিক অবস্থায়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি আপনারা যেমন মেনে চলবেন, আপনার সহকর্মী এবং দেশবাসী যেন মেনে চলে এবং আপনার কর্মস্থলে যেন সকলে মেনে চলে এই বিষয়ে আপনাদের যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস আমাদের জীবন এবং বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে, অনেককে আমরা হারিয়েছি। তাই এটা যেন আর বিস্তার লাভ করতে না পারে, সে জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আপনারা চলবেন। কারণ, দ্বিতীয় পর্যায়ের যে ঢেউটা আসছে, সেটা কেমন হবে আমরা জানি না।’
অনেক দেশ আবার লকডাউনে চলে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো সহনশীল অবস্থায় আছি। কিন্তু খুব সাবধানে চলতে হবে। ভ্যাকসিনের জন্য আমরা বুকিং দিয়ে রেখেছি, যখনই শুরু হবে তখনই বাংলাদেশ আনতে পারবে।’
করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণে তিনি সরকারের সব পর্যায়ে এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘ভ্যাকসিন সংগ্রহ, রাখা এবং এর প্রয়োগ করার পর কী কী করতে হবে, এ ব্যাপারে সব রকমের নির্দেশনা আমার দেওয়া আছে। সেটা মেনেই আমাদের এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে।’