বছরে ৫ কোটি টাকা ভাড়া পরিশোধের চুক্তিতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় একটি বহুতল ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি)। প্রধান কার্যালয়ের কিছু বিভাগের পাশাপাশি একটি শাখাও পরিচালনা হয় ভবনটি থেকে। কিন্তু করোনাকালে ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে পুরো ভবনটিই ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটি। এতে শুধু ভাড়া বাবদই এমটিবির ব্যয় কমবে ৫ কোটি টাকা। নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য পরিষেবার বিল বাবদ ব্যাংকটির ব্যয় আরো কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুধু ভবন ছেড়ে দেয়াই নয়, ব্যয় সংকোচনে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে রয়েছে শাখাগুলোর অতিরিক্ত জায়গা ছেড়ে দেয়া, ভাড়া কমানো, অনলাইনে প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা, হোম অফিসে কাজ করা কর্মীদের সংখ্যা বাড়ানো, কাগজবিহীন দাফতরিক কর্মকান্ড পরিচালনা ও প্রযুক্তি নির্ভর কার্যক্রম বাড়ানো।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় রাজধানীর তিনটি ভবন। এর মধ্যে গুলশানের একটি ভবনে বসেন ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহী। ভবনটির কয়েকটি ফ্লোর ব্যাংকটির নিজস্ব। পাশাপাশি রাজধানীর বাংলামোটরে নিজেদের একটি ভবনকে প্রধান কার্যালয়ের কিছু কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রধান কার্যালয়ের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তেজগাঁও শিল্প এলাকার একটি বহুতল ভবনও। ভাড়া হিসেবে নেয়া এ ভবনটির জন্য বছরে ব্যাংক থেকে ৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। এমটিবির রিটেইল বিভাগ পরিচালিত হয় এ ভবন থেকে। পাশাপাশি ব্যাংকের ট্রেনিং সেন্টার ও একটি শাখাও রয়েছে এতে। তেজগাঁওয়ের ভবনটিতে পরিচালিত কার্যক্রম সরিয়ে বাংলামোটর ও গুলশানের ভবনে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে আমরা তেজগাঁওয়ের ভবনটি ছেড়ে দিয়েছি। বিষয়টি জানিয়ে ভবনের মালিককে নোটিশ করা হয়েছে। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নোটিশ কার্যকর হবে। এ ভবনটির জন্য এমটিবি বছরে ৫ কোটি টাকা ভাড়া গুণছে। এখন ভাড়া বাবদ ব্যয় ছাড়াও ভবনটিতে কার্যক্রম পরিচালনার ব্যয়ও কমে আসবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, করোনা সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুর্যোগ থেকে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর অন্যতম শর্ত হলো ব্যয় কমানো। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক সে পথেই হাঁটছে। এরই মধ্যে আমরা দেশের সব শাখার অতিরিক্ত জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। চলতি বছরের মধ্যেই আমাদের ২৫-৩০ হাজার বর্গফুট জায়গা কমে আসবে। পাশাপাশি শাখাগুলোর ভাড়া ১৫-২০ শতাংশ কমানো হয়েছে। কর্মীদের জন্য আমরা অনলাইনে প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করছি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৫০ শতাংশ কর্মী বর্তমানে বাসায় বসেই কাজ করছেন। এ সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। প্রতিদিন অফিসে আসার প্রয়োজন নেই, এমন কর্মীরা বাসা থেকেই কাজ করবেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এ নীতি থেকে আমরা সরে আসার সম্ভাবনা কম। ব্যাংকের কর্মীরা যে কোন জায়গায় বসেই যাতে ব্যাংকের সব কাজ করতে পারে, এজন্য একটি প্লাটফর্ম অক্টোবরে চালু করা হবে। এ সফটওয়্যারে ব্যাংকের সব সলিউশনই থাকবে। এছাড়া ব্যয় কমাতে আমরা কাগজের ব্যবহার এক-তৃতীয়ংশ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি। কর্মী ছাঁটাই ও বেতন কমানোর উদ্যোগ নিতে চাই না আমরা। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন না, এমন কর্মীদের বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।