প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক অদক্ষতায় এগুতে পারছে না

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক অদক্ষতায় এগুতে পারছে না

6544445654

প্রবাসীদের ঋণ দেওয়ার জন্য ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে কার্যক্রমে আসে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলের মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৮ সালে তপশিলভুক্ত করে। বাণিজ্যিক কার্যক্রমের লাইসেন্স পাওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত কার্যক্রমে আসতে পারেনি। ফলে সরকার নির্ভরভাবেই চলছে এ ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনবল সংকটে এ ব্যাংক সামনে এগুতে পারছে না। আর যারা এ ব্যাংকে রয়েছে তাদের অযোগ্যতার কারণেই এমনটা হচ্ছে।

বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু না করতে পারা বিষয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্তাব জাবিন বলেন, আগে যেসব জায়গায় ব্যাংকের শাখা ছিল সেগুলোর অনেক জায়গায় ভল্ট নির্মাণ করার মতো অবস্থায় ছিল না। এজন্য শাখাগুলো স্থানান্তরের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া এখন মাত্র ৬৩টি শাখা রয়েছে। শাখার সংখ্যা বাড়ানোরও চেষ্টা চলছে।

জনবল ঘাটতির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় লোকবল দেওয়ার বিষয়েও সম্মত হয়েছে। তবে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী সব একবারে না দিয়ে ধাপে ধাপে দেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের পহেলা আগস্ট বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে লাইসেন্স দিয়েছে। তপশিলভুক্ত ব্যাংক হিসেবে আমানত সংগ্রহ, রেমিট্যান্স আহরণ, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ পায় ব্যাংক। একই সঙ্গে সাধারণ ব্যাংকিংও করতে পারে। যখন তপশিলভুক্ত হয় তখন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্তাব জাবিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তপশিলভুক্ত হওয়ার ফলে এখন বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ তৈরি হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত আগের অবস্থাতেই রয়েছে ব্যাংকটি।

প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করলেও এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স আহরণের কোনো কার্যক্রমে যেতে পারেনি ব্যাংকটি। এজন্য যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় তার উল্লেখযোগ্য কোনো কাজই এখন পর্যন্ত হয়নি বলে জানা গেছে। এজন্য প্রথম দিকের কাজের মধ্যে একটি হলো বিদেশের ব্যাংকে ‘নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট’ খুলতে হয়। সেটিও খুলতে পারেনি এ ব্যাংক। যদিও ব্যাংকটির অভিলক্ষ্যে বলা হয়েছে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যয় সাশ্রয়ী পন্থায় নিরাপদে ও দ্রুততার সঙ্গে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রেরণে সহায়তা প্রদান এবং বিদেশগামী ও প্রবাসফেরত কর্মীদের সহজ শর্তে স্বল্প সময়ে ‘অভিবাসন ঋণ’ ও ‘পুনর্বাসন ঋণ’ প্রদান। ব্যাংকের কৌশলগত উদ্দেশ্যেও একই ধরনের কথা বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত অভিবাসন ঋণ ও পুনর্বাসন ঋণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে ব্যাংকটি। অবশ্য সঞ্চয় প্রকল্প, মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প ও দ্বিগুণ আমানত প্রকল্প শুরু করেছে এ ব্যাংক। অন্যদিকে প্রবাসে থাকাকালে সেখান থেকে এ ব্যাংকের কোনো সহযোগিতা পাওয়ারও সুযোগ নেই কোনো প্রবাসীর।

এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ১২১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ঐ সময় যাদের নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের অনেকেরই শিক্ষা জীবনে তৃতীয় শ্রেণি রয়েছে। যদিও ঐ নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে শিক্ষা জীবনে কোনোটিতে তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য নয় বলেও উল্লেখ থাকলেও তা মানা হয়নি। এমনকি ঐ সময়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের সনদপত্রও পরে যাচাই করে দেখা হয়নি। যা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ঐ নিয়োগপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই এখন ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ না থাকায় তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন প্রায় অর্ধলক্ষ বিদেশগামী কর্মীকে অভিবাসন ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে মাত্র তিন দিনে অভিবাসন ঋণ পাওয়া যায়। আর বিদেশফেরত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী কর্মসংস্থানের জন্য পুনর্বাসন ঋণ পেয়েছেন। এ ব্যাংকের শাখা সংখ্যা ৬৩টি। করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। তাদের জন্য ১১টি খাতে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে গত ১৫ জুলাই থেকে ঋণ দেওয়া শুরু করেছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। গত পহেলা মার্চের পরে যারা দেশে এসেছেন সেসব প্রবাসী এ সুবিধা পাবেন। এজন্য এরই মধ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ২০০ কোটি টাকা বিনা সুদে দিয়েছে এ ব্যাংককে। পরবর্তী সময় আরো ৫০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা আছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Rayhan