(খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা, মোঃ মহাসিন মিয়া- ৮৩৬)
নাম মোঃ শাহাদাৎ হোসেন মধু (৭৮) একজন বাঁশি ওয়ালা। হাতে একটি আর পিঠে ব্যাগ ভর্তি বাঁশের বাঁশি। এগুলো বিক্রি করেই চলে তাঁর সংসার। মাঝে মাঝে সুর তুলেন বাঁশিতে, তার বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই বকশিস দেন তাঁকে। মধু চাচা শুধু বাঁশি ওয়ালা নয়, বাঁশি মামা নামে পরিচিত।
তবে এই বাঁশি ওয়ালা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে তিনি স্বীকার করেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ৭ নং সেক্টরের কমান্ডার নুরুজ্জামান সাহেব এবং লতিফ এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকার মাঝি ছিলেন তিনি। সেক্ষেত্রে সেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করছেন তিনি। বাঁশির সুর এবং বিক্রির সামান্য টাকায় ঘুরছে তাঁর সংসারের চাকা।
তিনি বলেন, তৎকালীন নাটোর জেলার বরাইগ্রামে তাঁর জন্ম। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৬ সালের দিকে স্বপরিবারে পারি জমান পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে। অত্র জেলার দীঘিনালাস্থ কবাখালীর মিলনপুরে এসে বসতি গড়েন। বৃদ্ধ বয়সে তেমন কাজ করতে পারেন না বলে পরিবারের দুই মেয়ে, স্ত্রী, নাতি, নাতনিদের নিয়ে বাঁশি বিক্রি করে চালাতে হয় তাঁর সংসার। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় সংসার চালাতে কষ্ট হয় তাঁর। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির লক্ষ্যে অম্লান চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে এগোতে পারছেন না। গরীব বলে কেহ সাহায্যের হাতও বাড়ায় না।
যুদ্ধকালীন সময়ের তাঁর কয়েকজন সহকর্মী প্রত্যয়নও দিয়েছেন তাঁর পক্ষে। নাটোর জেলার বরাইগ্রাম থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্রও রয়েছে তাঁর। যাবতীয় তথ্যাদি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় বরাবর গেজেট প্রাপ্তির আবেদন করলে তাকে মন্ত্রী মহোদয় কর্তৃক নোটিশে মন্ত্রীর দেয়া সাক্ষরিত কাগজপত্র নিয়ে জামুকায় যেতে বলেন। তাঁর পরেই দেশে করোনার থাবা। বন্ধ হয়ে গেলো তাঁর সমস্ত কার্যক্রম। মধু চাচা কেঁদে কেঁদে বলেন, জীবন বাজি রেখে অনেক কষ্ট করেছি দেশের জন্য, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি নিয়ে মরতে চাই। আমি সকল প্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্শন করছি।